চুম্বক ব্যবহারের কৌশল
চুম্বক ব্যবহার বিশ্ব প্রকৃতির সহযোগী। চুম্বক ব্যবহার ঔষধ ব্যবহারের মত কাজ করে। রক্ত সংবহন তন্ত্রের মাধ্যমে চুম্বক কাজ করে ও অন্যান্য তন্ত্র যথা পরিপাক তন্ত্র,
স্নায়ুতন্ত্র, শ্বসন তন্ত্র ও মূত্র তন্ত্রের মাধ্যমেও কাজ করে। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে চুম্বক ব্যবহারের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। চুম্বকের দুটো মেরুর কার্যকারিতার তারতম্য আছে। চুম্বকের উত্তরমেরু রোগের প্রকোপ হ্রাস করে। জীবানু সংক্রমণ দমন করে এবং ক্যানসার কোষকে মারে বা নিষ্ক্রিয় করে। এছাড়া এটি ফোড়া,
ক্ষত, চুলকানি, অর্বুদও নিরাময় করে। চুম্বকের
দক্ষিণ মেরু শক্তি বিকীর্ণ করে, যন্ত্রণাদায়ক স্থানে গরম ও শক্তিশালী রাখে। সহনশীলতা বাড়ায়, আয়তন বৃদ্ধি কমায় ও শরীর থেকে যন্ত্রণা দূর করে।
ব্যবহার প্রণালী
(Mode
of Application)
কতিপয় চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী এক সময় একটি মেরু ব্যবহারের
পক্ষে মত পোষণ করেন। কখনও কখনও তাঁরা দশ মিনিট উত্তর মেরু ও তার অদ্যবহিত পরে দশ মিনিট
দক্ষিণ মেরু ব্যবহার করার কথা বলেন। শরীরের অল্প ভাগে কোন অসুবিধা থাকলে একটি মেরু ব্যবহার করতে হবে।
অপরপক্ষে শরীরের বেশি অংশে বা সারা শরীরের রোগ
লক্ষণ থাকলে দুটি মেরু ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
ডাঃ অ্যালবার্ট বায় ডেভিস দন্ড চুম্বক
(১৫x৫x১২.৫ সেমি) বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে এক মেরু ব্যবহারের কথা বলেছেন এবং তা নানান রোঘ নিরাময় করে।
যথাঃ
ক) উত্তর মেরু
(নর্থ পোল
সংক্ষেপে
এন. পি.)
১)
গেঁটে
বাতঃ দক্ষিণ মেরু ব্যবহারে সন্ধি স্থলের ক্যালসিয়াম ধীরে ধীরে দ্রবণীয় হয়।
২)
রক্তরণঃ জন্মের পর বা মেয়েদের দুর্বল অঙ্গ।
৩) দুর্বল কোন টিস্যুর জন্য
ক্ষত।
কাটা প্রভৃতি থেকে
রক্তক্ষরণ।
৪) ভাঙা হাড়, ভাঙা সন্ধি ও অস্থি ভঙ্গ। দেহের ওপরের অংশে উত্তর মেরু ও নিচের অংশে
দক্ষিণ মেরু ব্যবহারে আরোগ্য হয়।
৫) ফোঁড়া ও ক্যানসার।
৬)
পোড়াঃ পোড়া জায়গায় উত্তর মেরু ব্যবহার করতে হবে। যন্ত্রণা কম হলে
দক্ষিণ মেরু ব্যবহার করতে হবে ও তা করলে কলাকোষকে শক্তিশালী করে ও
ক্ষতস্থান নিরাময় হয়।
৭)
উচ্চ রক্তচাপঃ ডান কানের ধমনী বরাবর উত্তর মেরু ব্যবহার করলে রক্তচাপ কমে।
৮)
সংক্রমণ, পুঁজ ও কোন কারণে
ক্ষরণঃ উত্তর মেরু ব্যবহারে নিরাময় হয়।
৯)
বৃক্কের সংক্রমণ অথবা
পাথরঃ উত্তর মেরু ব্যবহারে নিরাময় হয়।
খ)
দক্ষিণ মেরু (সাউথ পোল
সংক্ষেপে এস. পি.)
১) হাত, পা, কাঁধ ও পাছায়
যন্ত্রণাঃ চুম্বকের
দক্ষিণ মেরু ব্যবহারে নিরাময় হয়।
২) জীবনে সব কাজকে উৎসাহিত করে, কিন্তু সংক্রামক রোগকে বাড়িয়ে দেয়।
৩) অম্ল হওয়ায় গ্যাস হয় ও পরিপাক ভাল হয় না।
৪) ইনসুলিন উৎপাদন কম হয়।
৫) প্রস্টেট
বৃদ্ধিঃ প্রতি দুঘন্টা পর পর চুম্বক জল সেবন উপকার দেয়।
৬) চুল রঙ
করাঃ সুস্বাস্থ্য সম্পন্ন লোকের চুলের রঙ বৃদ্ধি পায়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে আধ ঘন্টা উত্তর
মেরুর উপর বসলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
৭)
হৃদরোগঃ দুর্বল হৃৎপিন্ড, নাড়ির গতি ও হৃৎস্পন্দন হ্রাস প্রভৃতি হৃৎরোগে
দক্ষিণ মেরু ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
৮) মাথায়
যন্ত্রণাঃ পাকস্থলীর বাঁ
দিকে চুম্বকের
দক্ষিণ মেরু প্রয়োগে উপশম হয়। চুম্বক জল ও ভাল খাবার খেতে হবে।
৯) দুর্বল
পেশীঃ সকালে ও বিকালে ২০ মিনিট করে চুম্বকের
দক্ষিণ মেরু ব্যবহারে পেশী সবল হয়।
১০) হাঁটাচলায়
দুর্বলতাঃ এক সপ্তাহ বা দশদিন
দক্ষিণ মেরু ব্যবহারে
দুর্বলতা হ্রাস পায়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে পর্যায়ক্রমে দুটো মেরু ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
চুম্বক চিকিৎসা দুটো উপায়ে করা যায়।
যথাঃ
১) স্থানিক চিকিৎসাঃ স্থানিক চিকিৎসায় চুম্বকের দুটো মেরু
এক সঙ্গে ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
আক্রান্ত জায়গায় চুম্বকের নির্দিষ্ট মেরু ব্যবহার করতে হবে। দেহের নির্দিষ্ট জায়গায় কোন পীড়িত জায়গায়
(যথাঃ- ফোঁড়া, গলা ফোলা, টনসিল যন্ত্রণা, অল্প জায়গায় ফোলা প্রভৃতি) স্থানিক চিকিৎসা খুবই কার্যকারী। জীবাণু ঘটিত রোগে চুম্বকের উত্তর মেরু ও অন্যান্য রোগে
দক্ষিণ মেরু ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। চুম্বক চিকিৎসায় চুম্বকের নির্দিষ্ট মেরু ব্যবহারে স্থানিক চিকিৎসায় ভাল কাজ করে।
২) সাধারণ
চিকিৎসাঃ- শরীরের বেশীরভাগ অংশ পীড়িত অবস্থা থাকলে চুম্বকের সাধারণ চিকিৎসা করা হয়। এই চিকিৎসায় চুম্বকের দুই মেরুই ব্যবহার করা হয়। দেহের ওপরের অংশে রোগ সংক্রমণে দু হাতের চেটোয় এবং দেহের নিচের অংশের রোগে দু
পায়ের পাতায় চুম্বক ব্যবহার করতে হবে। সারাদেহে রোগ
লক্ষণ দেখা দিলে, পর্যায়ক্রমে হাতের চেটো বা পায়ের চেটোয় চুম্বক ব্যবহার করতে হবে এবং তা একদিন সকালে দুহাতে ও পরের দিন বিকালে দুপায়ে অথবা দিনে দুবার চিকিৎসা করলে সকালে হাতে ও বিকালে পায়ে চুম্বক ব্যবহার করতে হবে। সাধারণ নিয়মানুযায়ী উত্তর মেরু ডান হাত বা পায়ে এবং
দক্ষিণ মেরু বাম হাত বা পায়ে ব্যবহার করতে হবে।
মানব তন্ত্রের যথাযথ কাজ ও সরল করার মতা হাতের চেটো ও পায়ের পাতার উপর থাকে। সুতরাং স্বাস্থ্যের উৎস হাতের চেটো ও পদতলের উপর অবস্থিত।
মানব শরীর আশ্চর্যজনক ভাবে গঠিত এবং এর সকল অংশ রক্ত সংবহন তন্ত্র ও
স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে
শরীরের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যুক্ত থাকে। হাত ও পা শরীরের অন্যান্য অংশের সঙ্গে
প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকে।
হাত ও পায়ে অনেক ভাঁজ থাকে যা শরীরের অন্যান্য অংশের সঙ্গে হাত ও পায়ের বিভিন্ন অংশকে
অন্তর্ভুক্তি করে।
বৈদ্যুতিক চিকিৎসা ও চুম্বক
চিকিৎসাঃ
বৈদ্যুতিক-এ দু’প্রকার প্রবাহ আছে; যথা ধনাত্মক ও ঋনাত্মক এবং চুম্বকের দুটো মেরু আছে; যথা উত্তর মেরু ও
দক্ষিণ মেরু। বিদ্যুৎ প্রবাহ চুম্বক মেরুর সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। সুতরাং বৈদ্যুতিক চিকিৎসায় ধনাত্মক প্রবাহ ব্যবহার করলে চুম্বক চিকিৎসায় উত্তর মেরু এবং ঋণাত্মক প্রবাহ ব্যবহার করলে চুম্বক চিকিৎসায়
দক্ষিণ মেরু ব্যবহার করতে হবে। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, চুম্বক চিকিৎসা ও বৈদ্যুতিক চিকিৎসা একই রকমভাবে কাজ করে।
সারণীঃ চুম্বক ব্যবহার পদ্ধতি
|